
তাং সাম্রাজ্যের ইতিহাস(History of Tang Empire)
Tang সাম্রাজ্যের ইতিহাস (History of the Tang Empire ):
তাং সাম্রাজ্য ৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চীন শাসন করেছিল। সুই রাজবংশের পতনের পর লি (Li) পরিবার এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়কাল চীনা সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক পর্যায় (Establishment and Early Stage):
* ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে লি ইউয়ান (Li Yuan), যিনি পরে সম্রাট গাওজু (Emperor Gaozu) নামে পরিচিত হন, সুই রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাং সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
* তার পুত্র লি শিমিন (Li Shimin), যিনি পরবর্তীতে সম্রাট তাইজং (Emperor Taizong) হন, সাম্রাজ্য বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
* সম্রাট তাইজংয়ের শাসনকাল (৬২৬-৬৪৯) তাং সাম্রাজ্যের একটি উজ্জ্বল সময় ছিল। তিনি দক্ষ শাসক ছিলেন এবং সাম্রাজ্যের প্রশাসন, আইন ও সংস্কৃতিকে উন্নত করেন। তার সময়ে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে এবং মধ্য এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ে।
উ জেটিয়ানের শাসন (Wu Zetian's Reign):
* সম্রাট গাওজোংয়ের (Emperor Gaozong) স্ত্রী উ জেটিয়ান (Wu Zetian) চীনের ইতিহাসে একমাত্র মহিলা সম্রাট হিসেবে পরিচিত।
* প্রথমে তিনি সম্রাজ্ঞী হিসেবে এবং পরে স্ব-ঘোষিত সম্রাট হিসেবে শাসন করেন (৬৯০-৭০৫)।
* তার শাসনকালে সাম্রাজ্যের বিস্তার অব্যাহত ছিল এবং তিনি মেধাবী ব্যক্তিদের প্রশাসনে নিয়োগের নীতি গ্রহণ করেন। তবে তার শাসন বিতর্কিতও ছিল, কারণ তিনি ক্ষমতা দখলের জন্য কঠোর手段 অবলম্বন করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
玄宗ের স্বর্ণযুগ (The Golden Age of Emperor Xuanzong):
* সম্রাট 玄宗 (Emperor Xuanzong)-এর শাসনকাল (৭১২-৭৫৬) তাং সাম্রাজ্যের সংস্কৃতির চূড়ান্ত শিখর হিসেবে গণ্য হয়।
* শিল্প, সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা এই সময়ে বিশেষভাবে উন্নতি লাভ করে। লি বাই (Li Bai) এবং ডু ফু (Du Fu)-এর মতো বিখ্যাত কবি এই যুগের ছিলেন।
* এই সময়কালে চীনের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ ছিল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
আন লুশানের বিদ্রোহ ও সাম্রাজ্যের পতন (The An Lushan Rebellion and the Decline of the Empire):
* ৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে আন লুশান (An Lushan) নামক এক তুর্কি-সোগদিয়ান জেনারেলের নেতৃত্বে এক বড় ধরনের বিদ্রোহ হয়। এই বিদ্রোহ প্রায় আট বছর ধরে চলে এবং তাং সাম্রাজ্যের দুর্বলতা প্রকাশ করে।
* বিদ্রোহের ফলে সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কমে যায়।
* বিদ্রোহ দমন করা গেলেও, এর ফলে আঞ্চলিক সামরিক শাসকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সাম্রাজ্যের ঐক্য দুর্বল হয়ে পড়ে।
* নবম শতাব্দীর শুরু থেকে তাং সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কৃষক বিদ্রোহ এবং আঞ্চলিক শাসকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়।
* ৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ঝু ওয়েন (Zhu Wen) নামক এক সামরিক নেতা শেষ তাং সম্রাটকে ক্ষমতাচ্যুত করে লেইয়াং-এ লিয়াং রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন, যা তাং সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটায়। এরপর চীন পাঁচ রাজবংশ ও দশ রাজ্যের যুগে প্রবেশ করে।
তাং সাম্রাজ্য চীনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়কালে চীন শুধু রাজনৈতিক ও সামরিকভাবেই শক্তিশালী ছিল না, বরং সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছিল। চাং'আন (Chang'an), সাম্রাজ্যের রাজধানী, তখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে Cosmopolitan শহর ছিল। সিল্ক রোড ধরে বহির্বিশ্বের সাথে চীনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এই যুগেই সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়েছিল।